কুড়িগ্রামে ত্রাণের অপেক্ষায় বন্যার্তরা

কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা:  কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলাসহ সবকটি নদ-নদীর পানি সামান্য কমেছে। জেলার ৫২ ইউনিয়ের সাড়ে পাঁচশ পরিবারের দুই লক্ষাধিক মানুষ ১০ দিন ধরে পানিবন্দি থাকায় দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। ত্রাণ না পেয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছে বেশির ভাগ পরিবার।

চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র এখনও বিপদসীমার ৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছে। নদের অববাহিকার চিলমারী, উলিপুর, রৌমারী, রাজিবপুর, কুড়িগ্রাম সদর ও নাগেশ্বরী উপজেলার ৪২ ইউনিয়নের দুই শতাধিক চর ও দ্বীপচরের বাসিন্দারা এখন পানিবন্দি। টানা ১০ থেকে ১২ দিন পানিবন্দি থাকা এসব বানভাসী মানুষের ঘরে সঞ্চিত খাবার শেষ হয়ে যাওয়ায় সংকটে পড়েছে। চারণ ভূমি তলিয়ে থাকায় গো-খাদ্য সংকটও তীব্র আকার ধারণ করেছে।

এসব এলাকার মানুষ নৌকা ও কলা গাছের ভেলায় বসে থেকে দিন পার করছে। এক বেলা খেয়ে না খেয়ে ঘরের ভিতর পাতা উচুঁ মাচানে ছেলে-মেয়ে নিয়ে রাত পার করছে। এসব এলাকার মানুষজন দিনভর চেয়ে থাকছে ত্রাণের নৌকার আশায়। কিন্তু দিন শেষেও নৌকার দেখা মিলছে না।

কুড়িগ্রাম সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের খেয়ার আলগার চর গ্রামের শাহাজাহান আলীর স্ত্রী আলপনা বেগম জানান, ১২ দিন ধরে বাড়ির ভিতর এক গলা পানি। ঘরের ভিতর মাচান উচুঁ করেও থাকার উপায় নাই। এজন্য পাশ্ববর্তী একটি উচুঁ জায়গায় ছেলে-মেয়ে নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ঘরত খাওয়ন নাই। স্বামী মানুষের নৌকায় করে যাত্রাপুর হাটতন ধার দেনা করি সামান্য চাউল নিয়ে আসিছে। তাও শেষ হয়ে গেছে। এখনও সরকারি সাহায্য পাই নাই।’

একই চরের রবিউল ইসলামের স্ত্রী শেফালী বেগম বলেন, ‘১০ দিন ধরি নৌকাত ঘুরতেছি। বাড়িতে থাকার উপায় নেই। সকাল থেকে না খেয়ে। সাহায্য তো দূরের কথা এখন পর্যন্ত কেউ দেখতেও আসে নাই।’

উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মসলার চরের দিনমজুর আব্দুল মালেক বলেন, ‘চেয়ারম্যান ১০ কেজি চাল দিয়েছে। বাড়িতে ৮ জন মানুষ। এ চাউল দিয়া ৩ দিনও যায় নাই।’

একই চরের আজিজুল ইসলামের স্ত্রী জেসমিন বলেন, ‘আমরা কোন সাহায্য পাই নাই। এই চরের দুই এক জন পেয়েছে।’

একই অবস্থা ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকার উলিপুর উপজেলার সাহেবের আলগা ইউনিয়নের গুজিমারির চর, চর বাগুয়া ও চর দুর্গাপুর, চিলমারী উপজেলার অষ্টমীরচর ইউনিয়নের মাহনতলা, আমতলা, বড়াইবাড়ী, শাখা হাতি, কড়াই বরিশালসহ দুই শতাধিক চরাঞ্চলের।

চিলমারী উপজেলার অষ্টমীর চরের চেয়ারম্যান আবু তালেব ফকির, উলিপুরের হাতিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিএম আবুল হোসেন ও সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী সরকার জানান, তাদের ইউনিয়নের বন্যা দুর্গত পরিবারের মধ্যে মধ্যে মাত্র ৩০ ভাগ পরিবারকে ত্রাণের ১০ কেজি করে চাল দেয়া হয়েছে। বাকি ৭০ ভাগ পরিবার খাদ্য সংকটে থাকলেও তাদেরকে কোন ত্রাণ দেয়া হয়নি।

কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান জানান, এ পর্যন্ত বন্যার্ত মানুষের জন্য চারশ মেট্রিক টন চাল, ১১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও ৪ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ পাওয়া গেছে। যা বিতরণ করা হয়েছে।

অন্যদিকে রোববার সন্ধ্যা সাতটায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া কুড়িগ্রামে এসে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় যোগ দেন। তিনি সোমবার চিলমারী ও উলিপুর উপজেলার বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন ও ত্রাণ বিতরণ করবেন।