কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, শিশু খাদ্যের সংকট

কুড়িগ্রাম সংবাদদাতাঃ সরকারিভাবে ত্রাণ অপ্রতুল হওয়ায় সবার ভাগ্যে ত্রাণ জোটেনি এখনও। ফলে বন্যা দুর্গত মানুষরা এখন চরম সংকটে।

অপরদিকে কুড়িগ্রামের চিলমারীতে শত কোটি টাকা ব্যয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের ডান তীর রক্ষা প্রকল্পের ৫০মিটার এলাকা নদী গর্ভে বিলিন হওয়ায় গোটা এলাকা পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। স্রোতের তোড়ে ঘরবাড়ি ভেসে যাওয়ার আশংকায় স্থানীয়রা আতংকিত হয়ে পড়েছে।

বন্যাদুর্গত এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, টানা ৯ দিন ধরে স্থায়ী বন্যায় জলবন্দি মানুষগুলো এখন মানবেতর জীবন যাপন করছে। কারো কারো খাবার থাকলেও রান্না করার অভাবে অভুক্ত থাকতে হচ্ছে।

এছাড়াও দিনমজুর পরিবারগুলো এক প্রকার না খেয়েই মানবেতর জীবনযাপন করছে। প্রায় সাতশ’ বর্গকিলোমিটার এলাকাব্যাপী বন্যাকবলিত সাড়ে ৫শ’ গ্রামে এখনো জনপ্রতিনিধিরা পৌঁছাতে পারেনি। ত্রাণ বিতরণেও কারচুপির অভিযোগ তুলছে স্থানীয়রা।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর এলাকার এনজিও কর্মী আবুল হোসেন ও অস্টআশির চরের মোন্নাফ আলী জানান, পানিবন্দি খাসের চর, গোয়ালপুরি, শীতেরচর পার্বতীপুর, গারুহারা, ফরাজিপাড়া, সিএলপি গ্রাম ও চর যাত্রাপুরে এখানো ত্রাণ পৌঁছেনি। শুকনা ও শিশু খাদ্যের অভাবে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘন্টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৫ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুড়িগ্রাম সেতু পয়েন্টে ধরলা নদীর পানি ১০ সেন্টিমিটার কমলেও এখনও বিপদসীমার ১৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বেড়েছে দুধকুমর নদেও।

এদিকে ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকার সাতটি উপজেলার আরও নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সদর উপজেলার পাঁচগাছি, যাত্রাপুর ও ঘোগাদহ ইউনিয়ন, উলিপুরের হাতিয়া ও বুড়াবুড়ি এবং নাগেশ্বরীর নুনখাওয়া ও ভিতরবন্ধ ইউনিয়নে প্রায় ১৫টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে।

দুই শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিমজ্জিত হয়েছে। এর মধ্যে পাঠদান বন্ধ রয়েছে ১২৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। নদীর ভাঙনে বিলীন হয়েছে ৫টি স্কুল। ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে আরো ১৮টি স্কুল। প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমির ফসল নিমজ্জিত রয়েছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ পর্যন্ত ৩ শত মেট্রিকটন জিআর চাল, ৮ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা ক্যাশ ও ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার ৯উপজেলায় বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার কোনো বরাদ্দ দেয়া হয় নাই।

এদিকে কুড়িগ্রামের চিলমারীতে শতকোটি টাকা ব্যয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের ডান তীর রক্ষা প্রকল্পের ৫০মিটার এলাকা নদী গর্ভে বিলীন হওয়ায় গোটা এলাকা পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।

স্রোতের তোড়ে ঘরবাড়ি ভেসে যাওয়ার আশংকায় স্থানীয়রা আতংকিত হয়ে পড়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ভাঙন ঠেকাতে বালু ভর্তি জিয়ো ব্যাগ ফেলানো হচ্ছে। এ কাজ চলছে দিন রাতে। বন্যার পানির তোড়ে বুধবার রাত থেকে বাঁধে ধস দেখা দিয়েছে।