চকরিয়ায় ৪৮ ঘন্টায় ৫ জনের অস্বাভাবিক মৃত্যু!

হতভাগা মোজার মিয়ার অবুঝ চার শিশু সন্তানের এখন কি হবে!

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: কক্সবাজারের চকরিয়ায় গত শুক্র থেকে সোমবার পর্যন্ত ৪৮ ঘন্টায় ২ স্কুল শিক্ষার্থী সহ ৫ জনের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। ৪৮ ঘন্টায় পরিকল্পিত হত্যা, অস্বাভাবিক ও সড়ক দূর্ঘটনা জনিত ৫ জনের মৃত্যূর ঘটনায় পুরো চকরিয়ায় সাধারণ মানুষের মাঝে একধরনে চাপা আতংক বিরাজ করছে। এতে এলাকার আইন শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে ভাবিয়ে তুলছে জনগনকে।

উপজেলার খুটাখালী ইউনিয়নে মস্তকবিহীন লাশ উদ্ধারে ৩দিন পার হতে না হতেই ২১শে আগষ্ট সোমবার সকালে একই জায়গার শিয়াপাড়া থেকে আবু হেনা (১৯) নামে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত যুবক ওই এলাকার আবদুর রহমানের পুত্র এবং পেশায় হাইয়েস চালক।

স্থানীয়রা জানান, সোমবার সকালের দিকে স্থানীয় লোকজন শিয়াপাড়ায় লাশটি দেখতে পায়। পরে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান চকরিয়া থানয় খবর দিলে পুরিশ লাশ উদ্ধার করেন। এদিকে লাশটি দেখতে শত শত উৎসুক জনতা ওই এলাকায় ভিড় জমায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি বলেন, স্ত্রীর সাথে বিচ্ছেদ ঘটা নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সামাজিক ও ইউনিয়ন পরিষদের দীর্ঘদিন ধরে শালিস বিচার চলছিল। এতে স্ত্রীর সাথে আবু হেনার বিরোধ ছিল । সাংসারিক বিরোধের জের ধরে আবু হেনা হত্যাকান্ড হতে পারে। তবে ওই যুবক প্রায় সময় স্থানীয়দের সাথে বিবাদে লিপ্ত থাকত বলে বলে জানা গেছে।

খুটাখালী ইউপি চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুর রহমান বলেন, লাশ পড়ে থাকার খবর জেনে তিনি থানা পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করেন। এখন পর্যন্ত মৃত্যূ রহস্য জানা যায়নি।

এবিষয়ে চকরিয়া থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি)বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, থানার ওসি(তদন্ত) মিজানুর রহমান এবং সঙ্গীয় ফোর্স গিয়ে লাশ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করেছে।

শনিবার সকালে পৌর সভার ভরামহুরীর একটি ভাড়া বাসায় চকরিয়া কোরক বিদ্যাপীঠের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র মহিউদ্দিন সোহেল (১৫) সিলিং ফ্যানের সাথে উড়না পেছিয়ে আত্বহত্যা করেন। সালেহ  উপজেলার কৈয়ারবিলের বাসিন্দা সৌদি প্রবাসী জসীম উদ্দিনের একমাত্র পুত্র। প্রতিবেশিরা ধারণা করেন সপ্তাহ খানেক আগে তার মা পারভিন আক্তার হজ্বের উদ্দেশ্যে পবিত্র মক্কায় গমণ করেন। আর দীর্ঘদিন ধরে ছেলেটির পিতা জসিম উদ্দিন অবস্থান করেছেন সৌদি আরবে। কোন এক অজানা ক্ষোভ ও অভিমানে শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন আত্মহত্যা করে।

গত ১৮আগস্ট শুক্রবার সকালে খুটাখালী ইউনিয়নের ধানক্ষেত থেকে মস্তক বিহীন অজ্ঞত ব্যক্তির গলাকাটা মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে লাশের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে পরদিন সন্ধ্যায় তার স্বজনরা শার্ট, প্যান্ট, টুপি ও সেন্ডেল দেখে লাশটি সনাক্ত করেন। আর সেই হতভাগা হল মোজাহের মিয়া (৩৫),বান্দরবানের লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের রাঙ্গাঝিরি এলাকার নুর মোহাম্মদের পুত্র এবং পেশায় রাবার ব্যাবসায়ী। মোজাহের মিয়া ৪ সন্তানের জনক। রবিবার সকালে লাশের বিচ্ছিন্ন মাথাটি ঘটনাস্থলের এক কিলোমিটার দুরে ধান ক্ষেতের মাটির নিচ থেকে উদ্ধার করা হয়। এ ব্যাপারে চকরিয়া থানায় মামলা হলে ও এখনো হত্যা রহষ্য উদঘাটিত হয়নি। কারা এ হত্যা কান্ড ঘটিয়েছে কেন তাকে নির্মম ভাবে খুন করা হল তার সাথে কার শত্রুতামি ছিল এ নিয়ে সচেতন মহলে চলছে চুল চেরা বিশ্লেষন।

একই দিন শুক্রবার সকাল সাড়ে ১১টায় খুটাখালী নয়াপাড়া সবুজ পাহাড় এলাকায় মাইক্রোবাস চাপায় সেতুমনি (৭) নামের শিশু নিহত হয়েছে। সে কক্সবাজার সদর পোকখালী ইউনিয়ন গোমাতলীর নুরুল হকের কন্যা ও পূর্ব গোমাতলী স.প্রা. বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেণীর ছাত্রী। ওইদিন মা-মেয়ে ঈদগাঁও ষ্টেশন থেকে ম্যাজিক গড়িযোগে খুটাখালী খালার বাসা আসার পথে দূর্ঘটনায় পতিত হয়।

তাছড়া ওইদিন শুক্রবার (১৮আগষ্ট) দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে জুমার নামাজ পড়াতে আরকান সড়কের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় রিংভং এলাকায় রিংভং রহমানিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার মুহি উদ্দিনকে একটি ম্যাজিক গাড়ি ধাক্কা দেয়। স্থানীয়রা আশংকাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে তাকে চমেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে রাত ১১টার দিকে তার মৃত্যু হয়। তবে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও এলাকাবাসী এটি দুর্ঘটনা নয় পরিকল্পিত হত্যাকান্ড বলেও দাবী করেন।
তবে হত্যা ,দূর্ঘটনা ও অস্বাভাকি কোন খুনেরই কুলকিনারা পাওয়া যাচ্ছেনা।

এদিকে খুনীদের নির্মমতার শিকার হতভাগা মোজার মিয়া অবুঝ চার শিশু সন্তানের এখন কি হবে!। দুই শিশু ইতোমধ্যে স্কুলে যাচ্ছে। কিন্তু বাবার মৃত্যুর পর কি তাঁরা আর স্কুলে যেতে পারবে। তাদের পোশাক-পরিচ্ছেদ ও খাবার দেবে কে। এসব প্রশ্ন নাড়া দিচ্ছে মোজার মিয়ার স্ত্রী সাবেকুন্নাহারকে। নিয়তি বড়ই বেদনাদায়ক। ২১ আগষ্ট দুপুরে চকরিয়া থানার উঠানে চৌকিতে চার শিশু সন্তানকে নিয়ে স্বামীর উদ্ধার হওয়া মস্তকের জন্য অপেক্ষা করছিলেন সাবেকুন্নাহার। ছবি তুলতে চাইলে মায়ের পাশে থাকা অবুঝ শিশুরা শুধু অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থেকেছেন। পরম করুনাময়ের দরবারে এটুকু প্রার্থনা যাতে মোজার মিয়ার শিশুরা যাতে ভবিষ্যৎ জীবনে পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে পারে।