না’গঞ্জে শিক্ষক শ্যামলকান্তির জিডি মামলা হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ

এমপি সেলিম ওসমান ঘটনা দায় এড়াতে পারেন না

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ
নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে লাঞ্ছনার ঘটনায় দায়ের করা অভিযোগ মামলা হিসেবে গ্রহণ করে তা ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। নারায়ণগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রবিবার বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই নির্দেশ দেন।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু। রুলের পক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান। এর আগে গত ১৯ জানুয়ারি এই ঘটনায় দাখিল করা বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনে স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ভিডিও ফুটেজটি পর্যালোচনা করে এটাই প্রতীয়মান হয় শিক্ষক কোনো অবস্থায় স্বেচ্ছায় কান ধরে উঠ-বস করেননি। বরং এমপি সেলিম ওসমানের নির্দেশেই তিনি তাকরতে বাধ্য হয়েছিলেন। ফলে এমপি কোনোভাবেই দায় এড়াতে পারেন না।

ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) শেখ হাফিজুর রহমান তদন্ত প্রতিবেদনটি এফিডেভিট করে দাখিল করেন। প্রতিবেদনে সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে ছয় দফা সিদ্ধান্ত তুলে ধরা হয়েছে।

সেগুলো হচ্ছে-শ্যামল কান্তি ওই স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র মোহাম্মদ রিফাত হাসানকে গত বছরের ৮ মে মারধর করেছেন। ইসলাম ধর্ম ও আল্লাহকে নিয়ে শ্যামল কান্তির কটূক্তি করার সত্যতা পাওয়া যায়নি। গত বছরের ১৩ মে ওই স্কুলের পরিচালনা পর্ষদের সভা চলাকালে স্থানীয় জনৈক শামসুল হকের ছেলে অপুর নেতৃত্বে ১০-১২ জন সভাকক্ষে ঢুকে প্রধান শিক্ষককে মারধর করার বিষয়ে সত্যতা পাওয়া গেছে। তবে অপু ছাড়া বাকি ১০ -১২ জনের নাম কোনো সাক্ষীই প্রকাশ করেননি।

সভা চলাকালে আনুমানিক বেলা ১১টার দিকে স্থানীয় মসজিদ থেকে ঘোষণা প্রদান করা হয় যে, ইসলাম ধর্ম ও আল্লাহকে নিয়ে কটূক্তি করেছেন শ্যামল কান্তি। কে বা কারা ওই ঘোষণা দিয়েছেন, তা নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। তবে বিদ্যালয়ের উন্নয়নমূলক কাজ নিয়ে কমিটির সদস্যদের মধ্যে বিরোধের কারণে এমন ঘোষণা দেওয়া হতে পারে বলে বিশ্বাস করার কারণ আছে।
গত বছরের ১৩ মে বিকেল পাঁচটার দিকে সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান প্রধান শিক্ষকের রুমে ঢুকে তাকে গাল-কান জুড়ে দুই হাত দিয়ে পর পর চারটি থাপ্পড় দিয়েছেন-এমন দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি। সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের নির্দেশে শ্যামল কান্তি ভক্ত কান ধরে ওঠ-বস করতে বাধ্য হয়েছেন- ভিডিও ফুটেজ দেখে প্রতীয়মান হয়েছে। তবে সাক্ষীদের সাক্ষ্য পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয়েছে যে, উপস্থিত স্থানীয় জনগণের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সংসদ সদস্য ওই নির্দেশ দেন।
পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত খবর আদালতের নজরে আনেন সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মহসিন রশিদ। এরপর আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন। পাশাপাশি এ ঘটনায় কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা সংশ্লিষ্টদের আদালতকে জানাতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

এরপর শ্যামল কান্তি ভক্তকে কান ধরে ওঠ-বস করানোর ঘটনায় স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের সম্পৃক্ততা না পাওয়া সংক্রান্ত পুলিশের প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করা হয়। ওই প্রতিবেদন পর্যালোচনার পর গত বছরের ১০ আগস্ট এ ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

আদালতের এ আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে অক্টোবর মাসে ঢাকার সিএমএম শেখ হাফিজুর রহমান নারায়ণগঞ্জে তদন্তে যান। তার সঙ্গে ছিলেন ঢাকার সিএমএম আদালতের দুই হাকিম গোলাম নবী ও মাজহারুল ইসলাম।  মোট ৬৫ পৃষ্ঠার মূল প্রতিবেদনে ২৭ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়।