নালা-খাল ও ফুটপাত দখলকারীরাই মিথ্যাচারে লিপ্ত-মেয়র নাছির

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: চট্টগ্রামে সোমবার একইদিনে নগর আ’লীগের দুই নেতার সমর্থকদের সমাবেশ পৃথক পৃথক অনুষ্টিত হয়েছে। দুই জনই একে অপরের বিরুদ্ধে বক্তব্য রেখেছেন। ফলে চট্টগ্রামের রাজনীতিতে শাসক দলের আবারো অশনি সংকেত দেখা দিয়েছে।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির বলেছেন, চলমান উন্নয়নকে বাধাগ্রস্থ করতেই আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত চলছে উল্লেখ্য করে বলেছেন- ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত সহ কোন বাধাই আমার চলার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে রাখতে পারবে না। নগরবাসীকে দেয়া প্রতিটি ওয়াদা অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়ন করাই আমার অঙ্গীকার।

তিনি সোমবার নগরীর ২৫ নং রামপুর ওয়ার্ডে সপ্তাহব্যাপী বৈশাখী মেলার উদ্বোধন করতে এসে এ কথা বলেন।

মেয়র নাছির বলেন, মানুষের দোয়া ও ভালবাসা থাকলে কোন চক্রান্তই সফল হবে না। মেয়র অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা বাস্তব কিছু চিত্র উপস্থাপন করে সাবেক মেয়র মহিউদ্দিনের প্রতি ঈঙ্গিত করে বলেন, যারা নালা-নর্দমা ও ফুট-পাত দখল, প্লট বরাদ্দের নামে ধোকাবাজি, আয়বর্দ্ধক প্রকল্পের নামে সরকারী সম্পদ অপচয়, নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য অবৈধ দখল সহ ভোগ বিলাসের জন্য বহুমুখী অবৈধ পন্থা অবলম্বন করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ অন্তরের জ্বালা প্রশমিত করার জন্য নগরবাসীর সামনে মিথ্যাচার ও বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত।

এ প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসন আমলে নানামুখী চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র এর মধ্য দিয়ে তার উন্নয়নের ধারাকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করেছিল। বিফল হয়ে বঙ্গবন্ধুকে ১৯৭৫ সনের ১৫ আগষ্ট নির্মমভাবে হত্যা করে উন্নয়নের চাকাকে বাধাগস্ত করা হয়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা না করলে তাকে থামানোর মত কোন ক্ষমতা ষড়যন্ত্রকারীদের ছিল না।

অতিতে অনেক দু:সময় ও প্রতিকুলতা মোকাবেলা করে জনগনের রায় নিয়ে ঈমানি দায়িত্ব হিসেবে সততার সাথে সেবা করার মানসিকতায় দায়িত্ব পালন করছি উল্লেখ্য করে নাছির বলেন, এ ক্ষেত্রে কোন অপশক্তি সফল হবে না। ৩ অর্থ বছরের মধ্যে নাগরিক সেবা শতভাগ নিশ্চিত করা হবে। উন্নয়ন, আলোকায়ন ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশ নিশ্চিত করে চট্টগ্রামকে বিশ্বমানের নগরীতে উন্নিত করা হবে।

অপরদিকে অসৎ ইচ্ছা ও নগরবাসীর বিরুদ্ধে চক্রান্ত বন্ধ করার জন্য নিজ দলের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ.জ.ম নাছিরের প্রতি আহবান জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক সিটি মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী।

একইদিন সোমবার বিকালে চট্টগ্রাম মহানগরীর লালদীঘি মাঠে সোনালী যান্ত্রিক মৎস শিল্প সমবায় সমিতি আয়োজিত সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি।

মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘সিটি কর্পোরেশনকে তিনি (নাছির) পাগলের আড্ডাখানা বানিয়ে ফেলেছেন।

তিনি মেয়র নাছিরকে উদ্দেশ্য করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম এসে আপনাকে সাবধান করার পরেও কোন পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়নি। নাগরিক সেবার মান না বাড়িয়ে নগরবাসির উপর ট্যাক্স বাড়ানোর প্রতিবাদ করেন তিনি।

এসময় সমিতির সভাপতি সামশুল হক, ১৪ দলীয় নেতা জসিম উদ্দিন বাবুল, মহিলা লীগ নেত্রী হাসিনা মমতাজ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, নগরবাসির সমস্যার শেষ নেই। পরিকল্পিতভাবে এসব সমস্যা সমাধানে কেউ এগিয়ে আসছেনা। তিনি চট্টগ্রাম আউটার স্টেডিয়ামে সুইমিংপুল নির্মানেরও প্রতিবাদ জানান।

এর আগে এ সমাবেশে গরম কথা বলে হবে বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন বর্ষীয়ান এই আওয়ামী লীগ নেতা। সেই কথার রেশ ধরে এদিন সমাবেশে বলেন, ‘অনেকে বলেছেন কড়া কথা বলবো। কেউ অন্যায় করলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে।’

শুধু মেয়র নাছির নন, চট্টগ্রামের তিনজন সংসদ সদস্যও বন্দর চেয়ারম্যানের কক্ষে বসে থাকনে বলে অভিযোগ তুলেন মহিউদ্দিন চৌধুরী।

মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন,‘নাছির সাহেব সিটি করপোরেশনের দরজায় তালা মেরে সার্বক্ষণিক বন্দরের চেয়ারম্যানের কক্ষে বসে থাকেন। চারটি স্টিভিডোরশিফ নিয়েছেন। একটা লোক একটা স্টিভিডোরশিফ নেবেন। কিন্তু কি কারণে, বাহুবলে চারটি নিয়েছেন। সেটা তো তার দায়িত্ব নয়। তবুও তিনি সেসব কাজগুলো করছেন।’

সমাবেশে সাবেক এ নগর পিতা আরও বলেন, ‘সিটি করপোরেশনকে পাগলের আড্ডাখানা বানিয়ে ফেলেছেন। উনি (নাছির) থাকেন না, তালাভরে রাখেন। তার কিছু তল্পিবাহক, যারা তার নামে শ্লোগান দেন তাদের সেখানে চাকরি দিয়েছেন।’

তিনি নাম উচ্চারণ করে বলেন, বিচ্ছু, (সামশুল হক) আমাদের লতিফ, মনজুর ভাতিজা সংসদে কথা বলে না, বলে বন্দরের চেয়ারম্যানের অফিসে। লজ্জা লাগে না। আপনি সংসদ সদস্য বসে রইলেন বন্দরের চেয়ারম্যানের চেম্বারে। এটা কি আপনার দায়িত্ব? কি দায়িত্ব পালন করছেন। জাহাজের ব্যবসা, লোহার ব্যবসা, ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়ার ব্যবসা। সেটা তো আপনার কাজ নয়।