সেতুর পাত ভেঙে যাওয়ায় সুবর্ণচর ও রামগতির বাসিন্দাদের ভোগান্তি, যান চলাচল বন্ধ

নোয়াখালী প্রতিনিধি:  নোয়াখালীর সুবর্ণচর ও লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার সীমানায় ভুলুয়া নদীর ওপর নির্মিত স্টিলের সেতুর ওপরের বেশির ভাগ পাত (বেকিং) ভেঙে গেছে। এ অবস্থায় সেতুটি দিয়ে প্রায় এক বছর ধরে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে দুই উপজেলার বাসিন্দাদের ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে।এই সেতু দিয়ে চলাচলকারী স্কুল কলেজগামী ছাত্রছাত্রীসহ জনসাধারণের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, ৮০ মিটার দৈর্ঘ্যরে সেতুটির পূর্ব অংশ সুবর্ণচরের পাঙ্খারবাজার-একরামবাজার সড়কের সঙ্গে আর পশ্চিম অংশ রামগতির চৌধুরীহাট সড়কের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করেছে। সেতুর ওপরের অধিকাংশ পাতই ভেঙে ফাঁকা হয়ে আছে। অটোরিকশা, ইজিবাইক ও মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন যানবাহনে আসা যাত্রীরা সেতুর মাথায় নেমে যাচ্ছেন। পরে হেঁটে সেতু পার হয়ে আবার যানবাহনে চড়ে গন্তব্যে যাচ্ছেন।

কিন্তু সেতুটির দুরবস্থা এতটাই যে এর ওপর দিয়ে এখন হেঁটে চলাচলও ঝুঁকিপূর্ণ। চলতি মাসের মাঝামাঝি রাতের অন্ধকারে দুই মোটরসাইকেল আরোহী সেতু পার হতে গিয়ে মারাত্মকভাবে আহত হন বলে জানালেন স্থানীয় লোকজন।

সেতুর পাত ভেঙে যাওয়ায় সুবর্ণচর ও রামগতির বাসিন্দাদের ভোগান্তি, যান চলাচল বন্ধসুবর্ণচরের চরজুবলী ইউনিয়নের মধ্যমবাগ্গ্যা গ্রামের বাসিন্দা রিয়াজ উদ্দিন বলেন, সেতুটি রামগতি উপজেলায় পড়লেও এটি দুই উপজেলার লোকজনের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যাতায়াত ছাড়াও একরামবাজার ও চৌধুরীরহাটে পণ্য কেনাবেচাসহ নানা কাজে এলাকাবাসীকে এই সেতু দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। বছরখানেক আগে স্থানীয় কিছু ব্যক্তি কাঠ দিয়ে সেতুটি মেরামত করে। পরে যানবাহন থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠলে কাঠগুলো তারা আবার তুলে নিয়ে যায়। ফলে এখন কোনো যানবাহনই চলাচল করতে পারে না।

সুবর্ণচরের চরজুবলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হানিফ চৌধুরী বলেন, ভুলুয়া নদীর ওপর নির্মিত সেতুটি সুবর্ণচর ও রামগতির লোকজনের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম। প্রতিদিন এই সেতু দিয়ে কয়েক হাজার মানুষ যাতায়াত করে। তারা এক বছর ধরে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। তবে রামগতির সাংসদের হস্তক্ষেপে এ বিষয়ে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে বলে তিনি শুনেছেন।

মাদ্রাসা শিক্ষক ইউনুছ শিকদার জানান,রামগতিতে একটি মাদ্রাসায় চাকুরী করেন। বাড়ি সুবর্ণচরের থানার হাটে,বাড়িতে লোকজন না থাকায় পেশাগত কারণে প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে এই সেতু দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। তিনি আরো বলেন সেতুর পাত ওঠে যাওয়ায় প্রতিনিয়ত ছোটখাট দূর্ঘটনা ঘটছে।

রামগতি উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছিল ৮০ মিটার লম্বা করে। তাতে স্প্যান ছিল চারটি। কিন্তু ভুলুয়া নদীর ভাঙনে সেতুর পশ্চিম পাড় ভেঙে যাওয়ায় যাতায়াতে সমস্যা সৃষ্টি হয়। পরে উপজেলা পরিষদের খরচে মাটি ভরাট করে চলাচল স্বাভাবিক রাখা হয়েছিল। এখন ওপরের পাত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।

রামগতি উপজেলা প্রকৌশলী জি এম কামাল বলেন, সেতুটির দৈর্ঘ্য আরও ২৬ মিটার বাড়িয়ে ওপরে স্টিলের পাতের পরিবর্তে স্থায়ী পাকা সেতু নির্মাণের একটি প্রকল্প ইতিমধ্যে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেটি বাস্তবায়ন হতে কিছুটা সময় লাগবে। তবে তার আগে জনসাধারণের চলাচল স্বাভাবিক রাখতে উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে কাঠ দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অংশ শিগগির মেরামত করা হবে।

সেতু দিয়ে হেঁটে সুবর্ণচরের পাঙ্খারবাজার থেকে চৌধুরীহাট এলাকায় যাচ্ছিলেন আবদুর রহিম। সঙ্গে ছিল ছেলের বউ আর মালামাল। অনেক কষ্টে সেতু পার হওয়ার পর তিনি বললেন, এই সেতুর বেহাল অবস্থার কারণে তাঁদের কষ্টের শেষ নেই। এক বছরের বেশি সময় ধরে তাঁরা এ কষ্ট সহ্য করছেন।

অটোরিকশাচালক জসিম উদ্দিন বলেন, আগে সেতুর ভাঙা পাতের ওপর কাঠ দেওয়া ছিল। ঝুঁকিপূর্ণ হলেও যাত্রী নিয়ে অথবা যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে যাতায়াত করা যেত। কিন্তু এখন সেতুর ওপরে ওঠাই যায় না। এই ভোগান্তির শেষ কবে, তা কেউ জানে না।