সময় বাড়লো হজের ভিসা আবেদনের

বাংলাদেশের হজযাত্রীদের জন্য ভিসার আবেদন করার সময় বাড়িয়েছে সৌদি আরব।ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ কার্যালয়ের পরিচালক আজ শুক্রবার সকালে এ কথা জানান।

তিনি বলেন, ভিসার জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সময় বাড়ানোর আবেদন মঞ্জুরের আনুষ্ঠানিক কোনো তথ্য দেয়নি সৌদি দূতাবাস। ধর্ম মন্ত্রণালয় বলছে, দূতাবাস ভিসার কাজ চালিয়ে যেতে বলেছে।

আশকোনার হজ কার্যালয়ের পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, সৌদি দূতাবাসে হজযাত্রীদের ভিসা নিতে পাসপোর্ট জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল গতকাল বৃহস্পতিবার।

ধর্ম মন্ত্রণালয় এই সময় বাড়ানোর আবেদন করে। হজ কার্যালয়ের পরিচালক বলেন, সৌদি দূতাবাস না করেনি। আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। আমরা শনিবারের মধ্যে সব কাজ শেষ করব।

সৌদি আরবের কোটা অনুযায়ী, এবার বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজে যাওয়ার সুযোগ পাবেন।
কিন্তু ভিসা জটিলতা, মোয়াল্লেম ফি বৃদ্ধি ও বাসা ভাড়ায় বিলম্বের কারণে হজযাত্রার শুরু থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মোট ২৯টি হজফ্লাইট বাতিল করতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ।
হজ অফিসের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার নির্ধারিত তারিখ পর্যন্ত ১ লাখ ২২ হাজার ৪২২ জনকে ভিসা দিয়েছে সৌদি আরব দূতাবাস, আর কারও পাসপোর্ট তাদের হাতে ছিল না। অর্থাৎ, এখনও ৪ হাজার ৭৭৬ জনের ভিসা আবেদন করা বাকি।

বাংলাদেশের হজ এজেন্সিগুলোর সংগঠন হাবের মহাসচিব শাহাদাত হোসেন তসলিম বলেন, সোমবার পর্যন্ত ভিসা আবেদনের সময় বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছিল। গতকাল তারা মেইলে জানিয়েছে, আগামীকাল পর্যন্ত তারা আবেদন জমা নেবে।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে এবার ৩০ অগাস্ট হজ হতে পারে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ২৬ অগাস্ট এবং সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইনস ২৭ আগস্ট পর্যন্ত ঢাকা থেকে হজ ফ্লাইট চালাবে।

হজ অফিসের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত ৭৩ হাজার ৪৫ জন বাংলাদেশি সৌদি আরবে পৌঁছেছেন। সেই হিসেবে আগামী নয় দিনে প্রায় ৫৪ হাজার হজযাত্রীকে সৌদি আরবে পৌঁছে দিতে হবে।

এর আগে হজযাত্রীদের ভিসা জটিলতা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নিরসন করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ইতিমধ্যে যাদের ফ্লাইট বাতিল হয়েছে বিমান ভাড়া করে তাদেরকে সঠিক সময়ের মধ্যে হজে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

বিচারপতি সৈয়দ মো. দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ এ সংক্রান্ত একটি রিটের শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।

পাশাপাশি হজযাত্রীদের হজে পাঠানো সংক্রান্ত যে অব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয়েছে। ৪ সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

ধর্ম সচিব, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন সচিব, পররাষ্ট্র সচিব ও হজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) মহাসচিবসহ পাঁচ জনকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

হজের অব্যবস্থাপনা নিয়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টের প্রেক্ষিতে রোববার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ এই রিট আবেদনটি করেন।

তিনি জানান, সৌদি সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে ভিসা জটিলতা দ্রুত নিরসনের জন্য আদালত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছে।

এ বছর সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় মোট হজযাত্রীর সংখ্যা ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন। তবে, ভিসা জটিলতার কারণে এ বছর বিশাল সংখ্যক বাংলাদেশি হাজির হজ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বলে সূত্র জানায়। ইতিমধ্যেই বাতিল হয়েছে ৩০টির মতো হজ ফ্লাইট।

হজযাত্রীদের সৌদি আরবে যাত্রার প্রথম ফ্লাইট পৌঁছে ২৪ জুলাই। শেষ ফ্লাইট ২৮ আগস্ট। ফিরতি ফ্লাইট শুরু হবে ৬ সেপ্টেম্বর ও শেষ ফিরতি ফ্লাইট ৫ অক্টোবর।

এ বছর চাঁদ দেখা সাপেক্ষে হজ অনুষ্ঠিত হবে ১ সেপ্টেম্বর।

এদিকে সৌদি আরব এ বছর ই-হজ ব্যবস্থাপনা চালু করলেও তাদের ই-ভিসা প্রিন্টে কারিগরি সমস্যার কারণে ভিসা প্রদানে সমস্যা হচ্ছে বলে জানিয়েছে হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)। ফলে হজ ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে বিমানকে।

জানা গেছে, চলতি হজ মৌসুম থেকে ই-হজ ব্যবস্থাপনা চালু করেছে সৌদি আরব। তবে দেশটির ই-হজের সার্ভারে কারিগরি সমস্যার কারণে ই-ভিসা প্রিন্টে জটিলতা তৈরি হয়েছে। ফলে আবেদন করলেও ভিসা পাচ্ছেন না বাংলাদেশি হজ যাত্রীরা।

অন্যদিকে, বিগত দুই বছরের মধ্যে কোনও ব্যক্তি হজ পালন করলে এবার ভিসার জন্য অতিরিক্ত দুই হাজার রিয়াল (৪৪ হাজার টাকা) দাবি করছে সৌদি আরব। দেশটির এ নির্দেশনায় নতুন করে ভিসা জটিলতা তৈরি হয়েছে। নতুন করে অতিরিক্ত চার্জ দাবি করায় বিপাকে পড়েছে হজ এজেন্সিগুলো।

বিমান সূত্রে জানা গেছে, হজ ফ্লাইট বাতিলের জন্য সৌদ আরবের ভিসা জটিলতার পাশাপাশি বাংলাদেশের হজ এজেন্সিগুলোকে দায়ী করছেন বিমানের কর্মকর্তারা। অনেক হজ এজেন্সি এখনও হজ যাত্রীদের জন্য সৌদি আরবে বাড়ি ভাড়ার কাজ শেষ করেনি।

যদিও হজ অফিসের নির্দেশনা রয়েছে, হজযাত্রীরা সৌদি আরবে যে বাড়িতে থাকবেন সেই বাড়ি বা হোটেলের নাম,তাসরিয়া নম্বর সম্বলিত স্টিকার তাদের পাসপোর্টের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে।

হজ ফ্লাইট বাতিল প্রসঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজবলেন, হজযাত্রী সংকটের কারণে ফ্লাইট বাতিল করতে হয়েছে। যেসব যাত্রীর এই ফ্লাইটে যাওয়ার কথা ছিল, তাদের ভিসা না হওয়ায় এ সংকট তৈরি হয়েছে।

হজের জন্য আগে থেকেই ফ্লাইট শিডিউল নির্ধারণ করে দেয় সৌদি আরব। এ মৌসুমে নির্ধারিত সময়ে হজ যাত্রীদের সৌদি আরবে পৌঁছাতে হলে প্রতিদিন দুই হাজার জনকে পরিবহন করতে হবে। ফ্লাইট বাতিল হলে এ প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হবে।

শাকিল মেরাজ বলেন, এ বছর হজ ফ্লাইট ও শিডিউল ফ্লাইটে ৬৩ হাজার ৫৯৯ (ব্যালটি ও নন-ব্যালটি) জন হজ পালনে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে জেদ্দা যাবেন।

হজ যাত্রীদের ঢাকা-জেদ্দা-ঢাকা রুটে পারাপারের জন্য ইতোমধ্যেই নিজস্ব বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজের পাশাপাশি ৪০৬ আসনের লিজে আনা বোয়িং ৭৭৭-২০০ উড়োজাহাজ প্রস্তুত রয়েছে। ফলে ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় আর্থিক ক্ষতিতে পড়তে হবে বিমানকে।

ভিসা জটিলতা প্রসঙ্গে হাব মহাসচিব শাহাদত হোসেন তসলিম বলেন, ‘সৌদি আরব এ বছর হজযাত্রীদের জন্য ই-ভিসা চালু করেছে। কিন্তু তাদের সার্ভারে সমস্যা দেখা দেওয়ায় ই-ভিসা প্রিন্ট করতে গিয়ে নানা জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে। এ কারণে ভিসা পেতে জটিলতা তৈরি হয়েছে।

এছাড়া, এবার নতুন নিয়ম করেছে সৌদি আরব। কোনও ব্যাক্তি বিগত দুই বছরের মধ্যে হজ পালন করলে এবার তাকে ভিসার জন্য অতিরিক্ত ২ হাজার রিয়াল (৪৪ হাজার টাকা) দিতে হবে। হঠাৎ করে এ সময়ে এত টাকা অনেক হাজি দিচ্ছেন না। ফলে এটাও একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

হজযাত্রীদের বাড়ি ভাড়া প্রসঙ্গে শাহাদত হোসেন তসলিম বলেন, ‘সব হজ এজেন্সি নিয়ম মেনে বাড়ি ভাড়া সম্পন্ন করে ভিসার জন্য আবেদন করেছে। অনিয়ম হলে এত ভিসা হতো না। ফলে বিমান যদি এমন অভিযোগ করে থাকে তা সঠিক নয়।